
প্রকাশিত: Sun, Jan 29, 2023 3:52 PM আপডেট: Sun, Jun 29, 2025 5:18 AM
সাম্প্রদায়িক বাঙালির গোবরে কেন পদ্মফুল ফোটে!
মঈন চৌধুরী: পণ্ডিত জ্ঞানেন্দ্রনাথ তর্করত্ন মশাই তার বাড়ির বাইরের বাগানে বসে কেশবচন্দ্র ভট্টাচার্যের সঙ্গে সমাজ উন্নয়ন এবং শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলাপ আলোচনা করছিলেন। এমন সময় পণ্ডিত মশাই দূরে রাস্তায় একটি বিলেতি ঘোড়ার গাড়ি বা ফিটন দেখে কেশববাবুকে জিজ্ঞেস করলেন- ‘কেশব, একটা ফিটন দেখিতেছি, ইহা কাহার? এই গ্রামে তো ফিটন আসিবার কথা নয়’। কেশব বাবু উত্তর দিলেন ‘আর বলিবেন না পণ্ডিত মশাই, সমাজ আর সমাজ রহিল না, অই পাড়ার হারু মণ্ডলের ছেলে রমেশ বর্মাতে গিয়া ব্যবসার নামে চুরি বাটপারি করিয়া প্রভূত অর্থ উপার্জন করিয়াছে। এখন ছোটলোকের ফুটানি করার ইচ্ছা হইয়াছে, সঙ্গে আমাদেরও অপমান করার সুযোগ পাইয়াছে, ফিটন কিনিয়াছে।
পণ্ডিত মশাই মুখ কালো করে নিজের টিকিতে একটা টান দিয়ে বললেন ‘ঘোর কলিকাল, ঐ শূয়রের পাল, নমশূদ্রের দলকে আমার বাপদাদারা এবং আমি খাওয়াইয়া পড়াইয়া বাঁচাইয়া রাখিয়াছি, আর এখন তাহারাই আমাদের অপমান করিতেছে। অবশ্য গোবরের মাঝে পদ্ম ফুটিলে কেহই তাহা তুলিয়া আনিবে না, পুজাতে কাজে আসিবে না, তবু ভগবানও এই অনাচার সহিবেন না, ঐ অস্পৃশ্য নমো হারামজাদারা ধ্বংস হইয়া যাইবে’। উপরিউক্ত প্যারাতে উল্লেখিত ‘গোবরের পদ্মফুল’, ‘শূয়রের পাল’ আর ‘নমো হারামজাদা’ প্রবাদ-প্রবচনে বাঙালি জনগোষ্ঠীর মনস্তাত্ত্বিক হীনমন্যতা, অহঙ্কারবোধ, পরশ্রীকাতরতা আর স্বার্থপরতার রূপ ও স্বরূপ পুরোপুরিভাবেই উন্মোচিত হয়েছে বলে ভাবা যায়।
বাংলা ভাষাকে বিশ্লেষণ করলে উপরে উল্লেখিত তিনটি ছাড়াও প্রচুর নাস্তিবাচক (ঘবমধঃরাব) বচন-প্রবচন পাওয়া যাবে। উদাহরণ হিসেবে আমরা আপাতত হুজ্জুতে বাঙ্গাল, ভাত নাই যার জাত নাই তার, বড়লোকের আস্তাকুরও ভাল, সোজা আঙুলে ঘি ওঠে না, অভাবে স্বভাব নষ্ট, টাকার গরম, ইতর বিশেষ, বামন-শূদ্র তফাত, দেবতা বুঝে নৈবেদ্য, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর, হাতের পাঁচ আঙুল সমান না আর বালস্য বালের কথা উল্লেখ করতে পারি। আর গালির কথা বললে দেখা যাবে বাল, কুত্তার বাচ্চা, হারামজাদা, চুতমারানি, খানকি, খানকির পুত, তোর মায়েরে থ থ, ইত্যাদি খুবই জনপ্রিয়।
বাংলা ভাষা ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোন ভাষায় এতো নাস্তিবাচক প্রবাদ-প্রবচন বা গালি নেই। ইংরেজি ভাষায় বহুল প্রচলিত ও ভথথশ ুড়ঁ (আমি তোমাকে... ) আর ঝড়হ ড়ভ ধ ইরঃপয (কুত্তার বাচ্চা) ছাড়া নাস্তিবাচক খুব একটা কিছু পাওয়া মুশকিল। আরও দেখা গেছে যে ইংরেজি ভাষার ইরৎফং ড়ভ ংধসব ভবধঃযবৎ ভষড়পশ ঃড়মবঃযবৎ বাংলায় এসে হয়ে গেছে নাস্তিবাচক ‘চোরে চোরে মাসতুতু ভাই’ আর ঞড়ড় সধহু পড়ড়শং ংঢ়ড়রষ ঃযব নৎড়ঃয হয়েছে ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট’। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে বাংলা ভাষায় এতো নাস্তিবাচক বচন-প্রবচন আর গালি কেন উপস্থিত হল? এ বিষয়ের উপর যৌক্তিক ও মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দেয়া যায়, নিচে সংক্ষেপে তা আলোচনা করা হল। দার্শনিক মার্টিন হাইডেগার বলেছেন- ‘খধহমঁধমব রং ঃযব ঐড়ঁংব ড়ভ ইবরহম, সধহ ফববিষ রহ ঃযরং যড়ঁংব.’ হাইডেগারের ভাষ্য মতে, ভাষা যদি সত্তার নিবাস হয়, মানিবিকতার অবস্থান যদি সেখানেই থাকে, তবে ফ্রয়েড আর লাকার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে মানুষের সত্তার রূপ ও স্বরূপ তাঁর ব্যাবহৃত ভাষার মধ্যেই পাওয়া যাবে।
দেখা যাচ্ছে যে আমাদের মনস্তাত্ত্বিক কাঠামোই আমাদের ভাষায় নিয়ে এসেছে আমাদের স্বার্থপরতা, পরশ্রীকাতরতা আর হিংসা প্রকাশের উপাদান। বাঙালির ভাষাকেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িক মনস্তত্ত্ব ও দর্শন আগামীতে বিস্তারিত লিখবো, তবে আমাদের দমাজে ধর্ম, বর্ণ, আঞ্চলিকতা, অর্থনীতি ইত্যাদি নিয়ে যে সাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনা কাজ করছে তা বিচার বিশ্লেষণের দায়িত্ব পাঠকদের দিতে চাই। আপনারা আমাদের ভাষার প্রবাদ, প্রবচন, গালি ইত্যাদি প্রয়োগ করে মমিন/কাফের, মালাউন/ম্লেচ্ছ, ঢাকাইয়া/নোয়াখাইল্লা, মমিনসিঙ্গা/কুমিল্লার কু, বাঙাল/ঘটি, জমিনের মানুষ/পাহাড়ি মানুষ,
বড়লোক/ছোটলোক, ফর্সা/কাল, পরীর মতো দেখতে/পেত্নীর মতো দেখতে ইত্যাদির মত যুগ্মবৈপরীত্যগুলো বুঝতে চেষ্টা করুণ এবং আপনাদের মতামত জানান। বাঙালির সাম্প্রদায়িকতা যে শুধুমাত্র ধর্মকে কেন্দ্র করে বিস্তার লাভ করেছে তা নয়, ধর্মের ভেতরে থেকেও জাত-পাত, আশরাফ-আফতাব, সুন্নি-কাদিয়ানি, মাইজ ভাণ্ডারী-দেওয়ানবাগী ইত্যাদি নামে সাম্প্রদায়িকতার প্রসার ঘটেছে। বাঙালির সাম্প্রদায়িক চেতনাকে উসকে দিয়ে সুবিধা লুটেছে সমাজের উপরিতলার নেতা গোছের লোকজন, রাজনীতিবিদগণ, মাস্তান আর চোর বাটপার শ্রেণির লোকজন। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
